মমতা ময়ী মা– সোমা বৈদ্য
নমীতা প্রতিদিনই বাসে করে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরে।আজ ও তেমনি বাসে করে বাড়ি ফিরছিলো। নমীতা জানালার পাশে বসতে খুব ভালোবাসে তাই আজ সে বাসের জালানার পাশে এসে বসলো। নমীর শরীর টা আজ বেশ ক্লান্ত লাগছে চোখেও ঘুম ঘুম,নমীতা আস্তে করে জানালার পাশে মাথাটা রেখে সবে চোখ টা বন্ধ করেছে।হঠাৎঅদ্ভুত চিৎকার কানে আসে। চোখ মেলে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে এক মা তার মৃত শিশুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে শিশুটির সারা শরীর রক্তে রাঙা।নমীতা ঐ দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে যায়। বাসটাও ছুঁটছে তার গন্তব্যের দিকে। নমীতার চোখে ভেসে ওঠে এমনি এক ঘটনা যেটা নিজে চোখে দেখে ছিলো আজও সে ভুলতে পারেনি। তখন নমীতা স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাএী ।সব বন্ধু বান্ধুবীরা মিলে পরীক্ষারর জন্য রওনা দিয়েছে ট্রেনে করে।দু ঘণ্টার পথ।বেশ হৈ চৈ শব্দে মেতে উঠেছে সবাই। তার মধ্য থেকে কানে ভেসে আসে চিৎকার কান্নার আওয়াজ,হঠাৎ করে সবাই চুপ পরিবেশ টা থম থমে হয়ে যায় ।ট্রেনের মধ্যে কেউ এক যাএী বলে ওঠে ইস শিশুটি ট্রেনের তলায় পড়েছে,শিশুটা কি বেঁচে আছে হয় তো কাটা পড়েছে। নমীতা কথাটা শুনতে সিট থেকে উঠে সে তাড়াতাড়ি ট্রেনের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে এক মা তার শিশুর জন্য চিৎকার করে কাঁদছে আর রেললাইনের পাতের উপর আঁছড়ে পড়ছে আর নিজের বুক চাপড়ে চলেছে ঘন ঘন আর বলছে আমার মামনিকে আমায় আনতে দেও । তিন চার জনে আটকে রাখে সেই মাকে । ঐ দৃশ্য দেখে নমীতা নিজের চোখের জল আর আটকাতে পারলো না চোখের জলে ভেসে চলেছে তার বুক। নমীতা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ট্রেনের যাএীরা যে যার নিজের ধরমের ঈশ্বর কে স্মরন করছে।কেউ মুসলিম,কেউ খৃষ্টান,আবার কেউ বৌদ্ধ যে যার ভগবান কে ডাকছে। নমীতার জীবনেও ঘটে যাওয়া এমনি এক দৃশ্য মনে পড়ে যায়। নমীতার তার ময়ের সাথে ঘুরতে বেড়োয় তখন নমীতা খুব ছোট। বয়স সাত বছর পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ভালো রেজান্ট করাতে নমীতার মা নমীতা কে দামি উপহার দেওয়ার জন্য কিছু জিনিস কিনতে বেড়িয়েছে। নমীতা আর নমীতার মা একটু তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য ট্রেন লাইন দিয়ে প্লাট ফর্মের দিকে আসছে প্রচুর মানুষের ভীড় হৈ চৈ ট্রেনের আসার খবর এদিকে ঐ ভীড়ের মাঝে নমীতা তার মায়ের কাছ থেকে পিছনে পরে গেছে।নমীতার মা প্ল্যাটফ্রমের ওপরে ভীড়ের মাঝে আর নমিতা রেল লাইনের ওপর নমীতা তার মাকে চিৎকার করে ডাকছে কিন্তু তার মায়ের কান পর্যন্ত্য পৌঁছাচ্ছে না, এদিকে নমীতাও প্ল্যাটফ্রমের উপর উঠতে পারছে না ।সে হাত বাড়িয়ে তার মাকে ডাকছে কিন্তু সাড়া নেই। এদিকে ষ্টেশনে ট্রেন ঢুকছে। নমীতার ভয়ে আরো চিৎকার করছে কেউ শুনছে না ট্রেনের লাল আলোটা নমীতার চোখে পড়ছে সে যেন ছুটে আসছে নমীতার দিকে নমীতা ভয়ে চুপ হয়ে গেছে তার মুখে আর আওয়াজ নেই। ট্রেনটা অনেক কাছে চলে এসেছে ঝড়ের বেগে নমীতার মা তখন চিৎকার করে ওঠে, কেউ একজন দৌড়ে কাছে এসে এক ঝটকায় তুলে নিলো নমীতাকে প্লাটফর্মে। নমীতা পড়ে যায় । নমীতার মা নমীতাকে জড়িয়ে ধরে। নমীতা এই কথা গুলো ভাবতে থাকে মনটা অন্ধকার চুপচাপ বসে থাকে তার সিটে। হঠাৎ পিছন থেকে এক জন চিৎকার করে বলে ওঠে শিশুটি ট্রেনে কাটা পড়েনি সে বেঁচে আছে। শিশু রেল লাইনের মাঝ খানে শুয়ে পড়েছিলো।ট্রেনের আঘাতে তার কোন ক্ষতি হয়নি। একথা শুনে সবার মুখে একটু হাসি ফোঁটে।আর বলে ভগবান আছে তিনিই ঐ অবুজ শিশুকে রক্ষা করেছেন। নমীতার চোখে জল আসে আর একটা বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে একটু হাসি ফোটে মুখে।তর মনে মনে ভেসে ওঠে ঐ মায়ের মুখ, যে শিশুটার জন্য পাগোলের মতো মাটিতে আঁছড়ে পড়ছিলো।মা হলেন মমতা ময়ী যার তুলোনা হয়না।
|